মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০

কথাঃআবোলতাবোল (বৃষ্টি পড়ে ঝমঝম/কালকে আমার ওজন কম)


 কথাঃ আবোলতাবোল  

 

বৃষ্টি পড়ে ঝমঝম

কালকে আমার ওজন কম

 

কলিংবেল বাজলেই বুক ধড়াস করে ওঠে আজকাল। আবার কে? অতিথি হলেই বিপদ। ঘরে ঢুকতে দিতে হবে। একমাত্র দুধওয়ালা ছাড়া আর কারও আসার কথা নয় সে এসে চলে গেছে বহুক্ষণ কে এল তবে?  সকালের মত অপরিচিত কেউ? মুখে মাস্কটা পরে নিই চটজলদি হাতে গ্লাভস দরজা খুলি সন্তর্পনে বাবা,পাশের ফ্ল্যাটের সঞ্জু! দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটা লজেন্সের প্যাকেট ভাইয়ের জন্মদিন দিতে এসেছে সকালের অপরিচিত মানুষটি ভুল করে বেল টিপেছিলেন তাঁকে দূর থেকেই হটানো গিয়েছে কিন্তু সঞ্জুকে!

সঞ্জুর মুখেও মাস্ক কিন্তু প্যাকেটটা নিতে গেলে তো হাত বাড়াতে হবে আমার বাড়ানো হাত আর সঞ্জুর বাড়ানো হাত মিলে কি এক মিটার দূরত্ব হবে আমাদের মধ্যে? মনে মনে চটপট ছেলের বারো ইঞ্চির লম্বা স্কেলটাকে আমার হাতের গোড়া থেকে সঞ্জুর হাতের গোড়া অব্দি দূরত্বের উপর বসিয়ে যাই  স্কেল হবে? তি্ন না সাড়ে তি্ন? এক মিটার হতে তো প্রায় চল্লিশ ইঞ্চি লাগবে আর একটু দূরে সরে যাব কি? দূরে সরলে তো প্যাকেটটাই নিতে পারব না হঠাৎ খেয়াল হয়,লজেন্সের প্যাকেটটার দৈর্ঘ্য হিসাবে আনিনি দুজনেই তো ছুঁয়ে আছি দু প্রান্ত বেশ লম্বা প্যাকেট সুতরাং

সঞ্জুও কি ভাবছে একই কথা! হয়ত কারণ  - নিজের জায়গা ছেড়ে এক ইঞ্চি নড়ছে না অথচ ভাইকে এমন দিনে লজেন্সের প্যাকেটটা না দিলেও ওর নয় মনে হল বেশ বিড়ম্বনাতে পড়ে আছে সঞ্জুও  সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন,মুখে বলা যতটা সহজ কাজে কি ততটাই!    

কিন্তু লজেন্সের প্যাকেটটা রাখব কোথায়? কোন বস্তুতে কতক্ষণ ভাইরাস টিকে থাকে,এ তএ তথ্য আমাদের এখন সবার জানা। অতএব কাছেপিঠে তো রাখা মুশকিল একটা সহজ সমাধান আছে,জানলা দিয়ে ছুঁড়ে  ফেলা কিন্তু ভালবাসার দান ওরকম করাটা শুধু অন্যায় নয়, অসভ্যতাও চারিদিক দেখে নিয়ে দেখি একটাই  জায়গা রয়েছে খাটের তলায় দেওয়ালের ধার ঘেঁষে রাখা  তাহলে খাটের যেসব দিকে  দাঁড়ানো যায়,সেখান থেকে একমিটারের বেশিই হয়ে যাবে প্যাকেটটার দূরত্ব লজেন্সের প্যাকেটকে আর যাই হোক বিশুদ্ধিকরণের জন্য সার্ফ সাবানের জলে বা স্যানিটাইজারে তো চোবানো যায় না! ছেলের এ নিয়ে বাতিকও বিস্তর।  

লজেন্সের প্যাকেট সমস্যার সমাধান করে আবার গুছিয়ে বিছানায় বসতে যাব,এমন সময় রাস্তায় সোরগোল জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি আমাদের এই জায়গাটা ঢুকে গেছে কন্টেনমেন্ট জোনে । বাঁশ বাঁধহচতারই আয়োজন চলছে নিচে।  

জানলা থেকে সরে এসে টিভি চালাই সেই একই খবর বাড়ছে,বেড়ে চলেছে সংক্রমণ ক্রমাগত উর্ধ্বমুখী মৃত্যহারও এসব পরিসংখ্যান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কে জানে খবর দেখতে দেখতে  হাজারো চিন্তা পাক খায় মাথায়

কন্টেনমেন্ট জোন মানেই তো সব কিছু বন্ধ। মুদির জিনিস ঘরে রয়েছে,কিন্তু আনাজপাতি,মাছ…। বিদেশ হলে প্রথমেই ভাবা হত,কন্টেনমেন্ট জোনে এগুলো পৌঁছে দেবার কথা। এখানে কড়াকড়িতে বিদেশি   চাল, কিন্তু ব্যবস্থাপনায় পুরো দেশি। আর দেশি মানেই ফাঁকি আর চাতুরির দশকাহন।

হেট,হেট। বাঁশ ঠেলে একটা ষাঁড় ঢুকে পড়েছে কন্টেনমেন্ট জোনে। ঘুরছে রাজার মত। ষাঁড়টাকে  তাড়ানোর চেষ্টা চলছে নানা ভাবে। কিন্তু ষাঁড়ের এলাকা ছেড়ে যাবার কোনও লক্ষ্মণ নেই। উপরন্তু বিদ্রূপের মত পিছন দিয়ে গোবর ছড়াচ্ছে এদিক ওদিক। হঠাৎ কর্মীদের কাছে আশীর্বাদের মত এসে   যায় বৃষ্টি।

ষাঁড় আবার বাঁশ সরিয়ে নিষিদ্ধ এলাকা ছাড়ে।

বৃষ্টিটা বেশ জোরে পড়ছে। একেবারে ঝমঝমিয়ে। ছেলে ব্যস্ত পড়াশোনায়। স্কুল নেই,কিন্তু অনলাইন রয়েছে। ক্লাস ওয়ান হলে হবে কি, এত অনলাইন যে বেচারা এবার গ্রীষ্মের ছুটিও পায়নি। স্কুলের বিশাল কাজ করতে করতে ওর দিন গেছে,গেছে রাতেরও কিছুটা।

এখন আবার পরীক্ষা চলছে। আজ অঙ্ক। কাল ড্রইং দিয়ে শেষ। ছেলে অঙ্ক করতে করতে ছড়া বানায়-‘বৃষ্টি পড়ে ঝমঝম/কালকে আমার ওজন কম।’

কন্টেনমেন্ট জোন কী ও জানে না।তাই ভাবছে,পরীক্ষা শেষ মানেই হালকা হয়ে যাওয়া। কিন্তু আমরা জানি হালকা নয়, ক্রমেই ভারী হচ্ছে আবহাওয়া। কনটেনমেণ্ট জোনে ‘উটের গ্রীবার মত নিস্তব্ধতা’ বড় হচ্ছে, ব্যাপক হচ্ছে।

মনের ওজন আনন্দে নয় কমে যাচ্ছে ভয়ে। স্রেফ ভয়ে।

 

 

  

 

 

 


৪টি মন্তব্য: