অণুগল্প
গোপাল
-শুনছেন,কলকাতায় আপনার একটা মূর্তি ভাঙা হয়েছে?
-কে ভাঙল? রাখাল না গোপাল?
-গোপাল।
-আমিও সেটাই ভেবেছিলাম।
-কেন কেন? আপনার বর্ণপরিচয়ে তো রাখালই মন্দ ছেলে ছিল আর গোপাল ছিল অতি সুবোধ বালক।
-আমার উপর গোপালের রাগের কারণ তো সেটাই। তোদের এক বাঙালি কবি অনেক কাল পরে লিখেছিল না, ‘রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করোনি।’ গোপালকেও বর্ণ পরিচয়ে সেটাই করে রেখেছিলাম। ছোটবেলায় কার না রাখাল হতে ইচ্ছে হয়? গোপালেরও হয়েছিল। হতে পারেনি আমার জন্য।
-আপনি যা ভাবছেন তা কিন্তু নয়? এ গোপাল আপনার গোপাল নয়।
-কীরকম?
-এ গোপাল হল gopal,gang
of party approved lumpens.-কী, চমকে গেলেন?
-না চমকাইনি। চমকানোর রোগ তো মর্ত্যেই চলে গিয়েছিল।
-কিছু বলবেন না,এত বড় ঘটনা!
- ঘটনাটা খুব বড় মনে হচ্ছে তোর কাছে? তোদের যারা ওখানে লাফালাফি করছে তাদের মুখের বচনের যা বাহার,বছরভর কাজকর্মের যা ছিরি তাতে আমার আসল মূর্তিটা ওখানে তৈরিই তো হয়নি কোনওদিন- বাইরেরটা তা সে আমার গোপাল ভাঙুক বা তোদের gopal, আমার কিন্তু কিছু এসে যায় না।
-তাহলে?
-আমার আর একটা মূর্তি বানিয়ে নিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। আমাকে না হলেও ওদের চলবে,কিন্তু আমার মূর্তি ছাড়া…
-আপনাকে একটা খবর দিই। মূর্তি বানানো হয়ে গেছে।
-তাই! কিন্তু পাথর না পঞ্চধাতু?
রাখাল
-জ্ঞান শোনার দরকার নেই। আসুন না, এই পরপারের ছাদ থেকে একটু দেখি আজকের গোপাল রাখালকে! একটু তাকান নিচের দিকে। ওই দেখুন একটা গোপাল। কোনওদিন জীবনে ফাঁকি দেয়নি পড়াশোনায়,মা বাবার কথার অবাধ্য হয়নি কখনও। বিরাট চাকরিও পেয়েছে। কিন্তু এখন কোথা থেকে ও আসছে জানেন?
-কোথা থেকে?
-বৃদ্ধাশ্রম থেকে। বৃদ্ধাশ্রম বোঝেন তো? আজকাল গোপালের দল তাদের মা বাবা বুড়ো হলে তাঁদের যেখানে রেখে দিয়ে আসে।
-মানে সংসার থেকে বিতাড়ন?
-ঠিক তাই। আর ওই দেখুন এক রাখাল। কোনওদিন পড়াশোনা ঠিক করে করেনি,মা বাবার কথা অগ্রাহ্য করেছে, কুসঙ্গে মিশেছে, গ্যাঁজা মদ ধরেছে অল্প বয়সে- কি করছে দেখুন?
-ওর হাতে কী ওটা?
-ঝুড়ি। ফলের। কাজ শেষে বাড়ি আসছে। নিয়ে আসছে মার জন্য।
-তার মানে তোর কথা অনুযায়ী দাঁড়াল এটাই, রাখালেরা পড়া না করলেও,গুরুজনদের কথা না শুনলেও এবং কুসঙ্গে মিশলেও মনের দিক দিয়ে ভাল। আর গোপালেরা উল্টো।-আচ্ছা,বলতো তুই কী ছিলি ওখানে? নিশ্চয় রাখাল। সেজন্যই ওদের হয়ে এত ওকালতি!
-ভুল। আমি ছিলাম গোপাল।
-গোপাল!
-হ্যাঁ গোপাল। রাখাল আমার এক ভাই ছিল।
-ও বুঝেছি। ভাইকে দেখেই তোর এই উপলব্ধি।
-না তাও না। ওখানে আর সময় পেলাম কোথায়? উপলব্ধিটা এখানে।
-এখানে? আচ্ছা বল তো তুই এখানে এলি কীভাবে?
-রাখালের গুলিতে।
-গুলিতে? বলিস কী রে। তবে যে বলছিস রাখালেরা খুব ভাল।
-ভালই তো! মাকে দিয়ে ঝিয়ের কাজ করালে আপনি সহ্য করতে পারতেন? বেকার ভাইটাও পারেনি। কোত্থেকে রিভালবার যোগাড় করে আমাকে একদিন'...তারপর মাকে নিয়ে ফেরার।
-তারপর?
-তারপর কী,আমার জানার কথা নয়। তবু জানি। আপনাকে দেখালামও তো তাকে।
খুব ভালো লাগলো, বিশেষ করে ' রাখাল' গল্পটি। অরূপ।
উত্তরমুছুন