বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০

গল্পঃ অণুগল্প (কালীপুজোর রাতে)

     ছোটদের গল্প 


Black, Blue, Branches, Dark, Dusk, Evening, Glow




কালীপুজোর রাতে             

 

 কালীপুজোর রাতে ভূত দেখল বিনিপিসি পিসিকে দেখে মনে হল,সাংঘাতিক ভয় পেয়েছে শরীর কাঁপছে চোখমুখও ঠিকরে বেরিয়ে আসছে কীভাবে এমন হল বলতে পারছে না কেউই

আমাদের বাড়িতেও পুজো প্রায় সকলেরই উপোস তবে কী কারণে জানিনা বিনিপিসি এবার উপোস করেনি

সন্ধেবেলায় পিসি বলল-‘তপু লাইটগুলোর এখনও তো কিছু করলি না!’  

আমি বললাম-‘সে আর কতক্ষণ লাগবে এই যাচ্ছি ছাদে।

পিসি বলল-‘চল আমিও যাব

সেইমত এসে ছাদ থেকে এলইডি চেনগুলো ঝোলাচ্ছিলাম আমরা দুজন হঠাৎ একটা চেন পিসির হাত ফস্কে  নীচে পড়ে গেল

পিসি বলল-‘দাঁড়া আমি নিয়ে আসছি

পিসি গেল আর এল না কিছুক্ষণ পরে নীচ থেকে চীৎকার গিয়ে দেখি পিসিকে নিয়ে ব্যস্ত সব্বাই কেউ হাওয়া করছে,কেউ মাথায় জল ঢালছে শুনলাম,ঘরের পিছনে পিসি ভূত দেখেছে

বাবা বলল-‘ ঘরের পিছনটায় গিয়েছিল কেন?’

উত্তরটা কেউ জানে না,আমি ছাড়া -‘একটা এলইডি চেন পড়ে গিয়েছিল,পিসি ওটা আনতে গিয়েছিল পিছনেবললাম আমি

ঘরের পিছনটা এমনিতেই আমাদের বেশ অন্ধকার থাকে তার উপর আজ অমাবস্যা বাবা বলল-‘চল তো সবাই আলো নিয়ে পিছনটায় দেখি কী দেখে ভয় পেল বিনি বিনিকেও তোল- চলুক আমাদের সঙ্গে নিজের চোখেই দেখে আসুক

বোঝাই যাচ্ছে যে বাবা নিশ্চিত পিসি অন্ধকারে ভূত দেখেনি অন্য কোনও কিছুকে ভূত ভেবেছে

আলো নিয়ে সবাই বাড়ির পিছনে গেলাম গিয়ে কিন্তু আমরা সত্যি সত্যি ভূত দেখলাম তবে প্রেতাত্মা নয়,অন্য ভূত

 পড়শি রানীদির মেয়েটা বাড়ির পিছনটায় রান্নাবাটি খেলে আমরা জানতাম কিন্তু সে-যে রাতে ওখানে  এমন কান্ড করেছে তা কে জানত! গিয়ে দেখি ওর খেলাঘরের চারদিকে জ্বলছে প্রদীপ আর বাড়ির  ভিতরের এমন কান্ডে নিজেকে দায়ী ভেবে একপাশে কাঁপছে থরথর করে

কিন্তু এই প্রদীপ দেখে পিসি ভয় পেল কেন? তো ভয় পাবার জিনিস নয়!

পিসি ততক্ষণে ধাতস্থ বলল-‘আমি এই প্রদীপগুলো দেখে অতীতে ফিরে গিয়েছিলাম ঠিক এভাবেই আমাদের বাড়িটাকে কালীপুজোর রাতে সাজাত মানুষটা তোমরা বিশ্বাস কর,আমি যখন এইসব ভাবছি্‌, ঠিক সেমুহূর্তে নিজের কানে শুনেছি তপুর মৃত পিসেমশাইয়ের গলা বলছে-‘বাড়িতে প্রদীপ দেবে না বিনি?’-দাদা,তুমি ব্যবস্থা করো,আমি ফিরতে চাই আমার স্বামীর ভিটেতে   

অ্যাক্সিডেন্টে পিসেমশাই মারা যাবার পর থেকেই পিসি এখানে আমি জন্ম থেকেই পিসিকে বাড়িতে দেখছি বাবা পিসিকে অনেক বুঝিয়েছে, ওখানে পিসেমশাইয়ের বিশাল সম্পত্তি,একমাত্র ছেলেটার কথা ভেবেও পিসির ওখানে যাওয়া উচিত পিসি রাজি হয়নি তবে দাদার উপর নির্ভরশীল নয় পিসি টিউশন,সেলাইয়ের কাজ করে নিজের আর ছেলের খরচ পিসিই চালায় পিসির ছেলে,রাজুদা এবার মাধ্যমিক দেবে এখান থেকেই

পিসি বাড়ি ফিরতে চায়,এর চেয়ে আনন্দের সংবাদ আমাদের বাড়িতে আর কী হতে পারে! তার মানে ভূত দেখা মানে শুধু খারাপ কিছু তা নয় ভূত দেখলে মানুষের অনেক ভুলও ভাঙে!

এমন ভূত নামিয়ে আনার পিছনে রানীদির সেই ছোট্ট মেয়েটা কালীপুজোর রাতে প্রসাদ খাবার সময় এবার একটু বেশিই নজর দেওয়া হয় ওর দিকে

 

 

 


৬টি মন্তব্য: