বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০

কথাঃ আবোলতাবোল (কাঁঠাল)


কথাঃআবোলতাবোল

 

কাঁঠাল

 

 

এবার বাড়ির বাগানে লিচু ধরেছিল অপর্যাপ্ত এখন শুনছি আমও নাকি অঢেল কিন্তু কাঁঠাল? এটা তো কাঁঠালেরও কাল কাঁঠালের কথা তো বাড়ির কারও ফোনে শুনছি না কাঁঠাল নিয়ে আমার আগ্রহ কম তাই কাঁঠালের কথাটা আমিও বারে বারেই শুধোতে ভুলে যাচ্ছি কাঁঠাল কি তবে হয়নি,নাকি যা হয়েছে এঁচোড় অবস্থাতেই শেষ! আরও একটা কথা অবশ্য মনে চ্ছে আমার যেমন আগ্রহ নেই বলে  শুধোতে  ভুলে যাচ্ছি,ওদের দিক দিয়েও ব্যাপারটা সেরকম নয় তো!

মনে মনে গুনি হ্যাঁ,এদিক সেদিক মিলিয়ে তো কম নয় সাত সাতটা কাঁঠাল গাছ কোনওটাতে  খাজা,কোনওটাতে রসখাজা,কোনওটাতে গোলা,কোনওটাতে রুদ্রাক্ষী হরেক কিসিম রুদ্রাক্ষী কাঁঠালগাছটা বাবার খুব প্রিয় ছিল গাছের কাঁঠাল বাবা একাই একখানা খেতেন আসলে খুব বড় সাইজ তো নয় কিন্তু কী মিষ্টি! কাঁঠাল শেয়ালদের খুব প্রিয় বলে এর অন্য নাম শেয়াল-খাগি আমারা অবশ্য রুদ্রাক্ষী,শেয়াল-খাগি কোনওটাই কোনওদিন বলিনি আমারা এর মধুর স্বাদের জন্য একে বরাবর ডেকে এসেছিমধু-কাঁঠালনামে

এককালে গাছে কাঁঠাল পাকলে আমাদের আনন্দের সীমা থাকত না আর এখন? পাকা কাঁঠাল খাওয়াই হয় না আম কাঁঠালের সময় বাড়ি গেলেও,আমই খাই কাঁঠাল খাবার কথা মনেই হয় না কাঁঠালের এখন যা কিছু খাতির তা এঁচোড় অবস্থাতেই

ঘটনা যে শুধু আমার বেলাতেই তা কিন্তু নয় পাকা কাঁঠাল-ভালবাসা লোক সব জায়গাতেই এখন কম কেউ কেউ তো আবার এর গন্ধটাও সহ্য করতে পারে না

অথচ কাঁঠালের কিন্তু এককালে আমের তই  আদর ছিল ঘুমপাড়ানী মাসিপিসির গানে কাঁঠালকে আমের সমান গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আমাকাঁঠালের বাগান দেব/ছাঁওয়ায় ছাঁওয়ায় যেতে,/উড়কি ধানের  মুড়কি দেব/পথে জল খেতেপশ্চিমা রামায়ণে হনুমানের কাঁঠাল ভক্ষণের বর্ণনা দিতে গিয়ে পন্ অর্থাৎ  কাঁঠালকে অমৃতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে শোনা যায় স্বয়ং মহাপ্রভু এই ফলটি বড় ভালবাসতেন

কালের রথী মহারথীরা কেউই কাঁঠাল-রসে নিজেদের বঞ্চিত রাখেননি দীনবন্ধু মিত্র কাঁঠালে এত মজেছিলেন যে কাঁঠাল কোষকে ভালবাসার সঙ্গে এক করে দেখেছেন পল্লীচিত্রে চিত্রকর দীনেন্দ্রকুমার রায় তো আম লিচু নয়,শুধু কাঁঠালেরই ভক্ত ছিলেন পরশুরামের কেদার চাটুজ্যে যেভাবে কাঁঠাল-কীর্তন করেছেন,তাতে বোঝা যায় ফলটি রাজশেখর বসুরও কম প্রিয় ছিল না রাজশেখর বসুর দাদা শশিশেখর বসু তোখাজা কাঁঠালশিরোনামে আস্ত একটা রম্যচনাই লিখে গেছেন রবীন্দ্রনাথ আম ভালবাসতেন,   ভালবাসতেন এঁচোড়ের নানা পদ কিন্তু কাঁঠালের সেভাবে গুণগ্রাহী না হলেও একেবারে অনাদর করতেন না ফলটিকে শিলাইদহ থেকে জোড়াসাঁকোয় তিনি একবার কাঁঠাল পাঠিয়েছিলেন ১২৯৮ বঙ্গাব্দে অভিজ্ঞা দেবীর কবিপত্নীকে লেখা এক চিঠিতে এরকমই এক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে ওদিকে রূপসী বাংলা কবির তো সাধই ছিল,’কুয়াশার বুকে ভেসে আসিব কাঁঠাল ছায়ায়

মনে আছে,ছেলেবেলায় কাঁঠাল পাকলে তার খুশবুতে আমরা যেমন লাফিয়ে উঠতাম,তেমনই সাড়া পড়ে যেত পশুপাখিদের মধ্যেও ভোঁদর,হোঁদর,হুড়ার,শেয়াল,হনুমান একে একে সকলেই হাজির হত মঞ্চে আর এদের হাত থেকে পড়ে যাওয়া,ঝুলে থাকা পাকা-আধপাকা কাঁঠাল বাঁচাতে আমাদের কত কসরৎই না  করতে হত এখনও নিশ্চয় এইসব প্রাণীদের মধ্যে একই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় কাঁঠাল নিয়ে উৎসাহ নিভেছে,তাই খোঁজও রাখি না,কীভাবে এখন এদের তাড়ানো হয়  


1 টি মন্তব্য:

  1. আমাদের বাড়িতে এখনও একটা কাঁঠাল গাছ আছে স্যার।সেটাতে ভালোই কাঁঠাল ফলে। আমরা মোটামোটি সবাই পছন্দ করি বাড়িতে কাঁঠাল খেতে।

    উত্তরমুছুন