বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০

গল্পঃ ঘুড়ি

ছোটদের গল্প 

Two People Running On Bridge Over Body Of Water


ঘুড়ি                                          

 

 

ঘুড়িটা কাটা পড়েছে তিনদিন হলকাটা ঘুড়িটা ঝুলছে পবনদের শ্যাওড়া গাছে কিন্তু কাটা ঘুড়িটা নিয়ে আসায় কোনও গা নেই তিলুর বিকেলবেলায় বাড়ির সামনের ছোট্ট মাঠটায় তিলুর ঘুড়ি আজ তিনদিন নেই তবু ঘুড়ি-অন্ত প্রাণ ছেলেটা চুপচাপ

কাটা ঘুড়িটা এমনকিছু উপরে নেই শ্যাওড়াগাছের ইচ্ছে করলে ওটা নামিয়ে আনাই যায় নামিয়ে এনে আবার মেরামত করে বিকেলে ওড়ানোই যায় কিন্তু মেরামতের জন্য খরচ আছে সুতো সব ছিঁড়েখুড়ে একশা কে দেবে মেরামতের খরচ!

দাদু থাকলে ভাবতে হত না কিন্তু দাদু এখন আকাশে তারা বাবার কীই বা রোজগার! দাদুর পেনশনের টাকাতেই সংসার চলত এখন সংসারটাই চলছে না,তো ঘুড়ি!

পবনের ঠাকুমা মাঠে বসে ছেলেদের খেলা দেখে দেখে তিলুর ঘুড়ি ওড়ানোও পবনের মত তিলুও তাঁকে ঠাকুমাই ডাকে ঠাকুমা আজ বিকেলে তিলুকে চুপচাপ মাঠে বসে থাকতে দেখে বলে-‘কী রে নাতি,তোর ঘুড়ি দেখছি না আকাশে!’

তিলু আঙুল দিয়ে শ্যাওড়াগাছটা দেখায়

-‘খুব উঁচুতে তো নয়! পেড়ে নিয়ে যেতে পারছিস না?’

পেড়ে নিয়ে গেলেই যে ওড়ানো যাবে না,ঠাকুমাকে বলে কী লাভ! তিলু আর কথা না বাড়িয়ে বাড়িতে ফেরে

দাদুর কথা আজ খুব মনে পড়ে  তিলুর কত ঘুড়িই যে দাদু কিনে দিয়েছেন তিলুকে! তা দেখে শুধু পবন নয়,পবনের ঠাকুমা সুদ্ধ তিলুকে টিপ্পনি কাটত-‘পেয়েছিলি একখানা নাতি-অন্ধ দাদু! একটা ঘুড়ি    ছিঁড়তেই আর একটা ঘুড়ি রেডি

ওরা একটু বাড়িয়েই অবশ্য বলত অতটা বেহিসেবি তিলু নয় ঘুড়ি ছিঁড়লে ও অনেকবার আঠা দিয়ে নিজে মেরামত করত সুতোও গিঁট দিয়ে জোড়া দিত কিন্তু এবার ঘুড়িটা কিছুটা আস্ত থাকলেও সুতো আর গিঁট দিয়ে জোড়া অসম্ভব সুতোর প্রায় পুরোটাই গায়েব কোথায় ছিঁড়ে পড়ে আছে বলা মুশকিল

সন্ধেবেলায় পবন তিলুদের বাড়ি পড়তে আসে মা পড়ায় পবন এক ক্লাশ উপরে পড়ে তিলুর সেদিন পবন এসেই তিলুর মাকে বলে-‘ঠাকুমা এই রচনার পুরোটাই বলে দিয়েছে ঠিক হয়েছে কিনা জানাতে বলেছে তোমাকে

পবনের ঠাকুমার বিদ্যে বেশি নয় ফাইভ কিন্তু জ্ঞান প্রচুর পবনের বাংলা রচনায় মাঝে মাঝেই ঠাকুমার অবদান থাকে কোনওদিন ঠাকুমার অবদানের প্রশংসা ছাড়া তিলু অন্যকিছু বলতে শোনেনি মাকে আজ পুরোটা ঠাকুমার বলা শুনে মা শুধু প্রশংসাই করে না,জোরে জোরে পড়েও যায় রচনাটা রচনাটা কানে ঢুকলেও তিলুর আজ এসবে তেমন গা নেই এখনও ও দাদুর কথাই ভেবে চলেছে

 কাটা ঘুড়িটা আনবে না মনে করেও পরদিন স্কুল থেকে ফিরে তিলু আনতে যায় কারণ পবন কাল  পড়তে এসে বলেছে,হাজরাদের একটা ছেলে নাকি ঘুড়িটা নিয়ে যাবার তালে রয়েছে ঘুরঘুর করছে আশেপাশে পারছে না ঠাকুমার জন্য

ঘুড়িটা যতটা নিচে ভেবেছিল তিলু ততটা নিচে কিন্তু নয় সেভেনের সবচেয়ে লম্বা ছেলে ও তবু বার কয়েক লাফাতে হল তিলুকে ঘুড়িটা পাড়ার জন্য অবশেষে সফল ঘুড়িটা পেড়ে ও পড়েও গেল মাটিতে ধুলো ঝেড়ে ঘুড়িটা মাটি থেকে তুলতে যাবে,এমন সময় ওর চোখ বড় হয়ে গেল বিষ্ময়ে ঘুড়িটায় পিন্ দিয়ে আটকানো আছে একটা কুড়িটাকার নোট শুধু তাই নয়,ঘুড়িটার গায়ে লেখা রয়েছে একটা চিঠিও  

তিলু,তুমি কি জান, তুমি ঘুড়ি ওড়ালে আমি রোজ নেমে আসি আকাশের অনেকটা নিচে!আজ তোমার ঘুড়িটার ওড়া দেখেই বুঝেছিলাম ওটা খুব খারাপভাবে ছিঁড়বে তাই আটকে গেলাম টাকাটা তুমি ঘুড়ি না ওড়ালে আকাশে দাদুটা কি খুশি থাকতে পারে! তোমার ঘুড়িই তো আমাদের দুজনের যোগসূত্র যত   তাড়াতাড়ি পার মেরামত করে আকাশে ওড়াও ঘুড়িটা -তোমার দাদু   

দাদুর চিঠিটা পড়ে তিলুর চোখের কোনে চিকচিক করে কিন্তু সত্যি এই টাকা,চিঠি সব দাদুর কাজ! দাদুর হাতের লেখা এতটা কাঁপা কাঁপা হয়ে গেছে! হতেও পারে কিন্তুযোগসূত্রকথাটা তিলুর কেমন চেনা চেনা লাগে কোথায় যেন শুনেছে হঠাৎ তিলুর মনে পড়ে যায় কাল সন্ধেয় মা পড়ছিল পবনের ঠাকুমার লেখা রচনায় ছিল কথাটা


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন