মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০

কথাঃআবোলতাবোল (ছাই)


কথাঃআবোলতাবোল 

ছাই

 

আমি হচ্ছি,ছাই ফেলতে ভাঙা কুলোকে যেন কথাটা বলল সেদিন তখন থেকেই দেখছি কথাটা কেমন কুনকুন করছে ভিতরে

বক্তার জন্য নয়(কেননা সে অর্থে আমরা অনেকেই তো সমাজে সংসারে তাই) কুলোর জন্যও নয় কুনকুনানিটা ছাই-এর জন্য শহরে তো ছেড়েই দিলাম গ্রামের অন্দরেও এখন ঢুকে গেছে এলপিজি ফলে ওখানে কুলো এখনও যতটা আছে,ততটা নেই ছাই

প্রাক এলপিজি যুগে ছাই ছিল আমাদের নীরব সেবায়েত নীরব,কেননা তাঁর সেবায় আমরা এতটাই অভ্যস্ত ছিলাম,যে তাকে চোখেই পড়ত না ভাগ্যিস বিমল মিত্র রেলের চাকরিতে দুর্নীতি দমনে ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে নিজেকে ছাই-এর মত মূল্যহীন ভাবতে শুরু করেছিলেন নাহলে  তোছাইনামে বড় কোনও লেখাও আমরা পেতাম না ছাই নামে বিখ্যাত কলমচিরাই যখন বিশেষ কিছু লেখেননি,তখন অখ্যাতজনেরা আর কীভাবে সাহস দেখান! এমনিতেই তো লেখা একটু খারাপ হলে,লেখা আর তখন তাদের লেখা থাকে না,লোকের চোখে হয়ে যায়, ‘ছাইপাঁ’!  

নাগরিক জীবনে ছাইএর অস্তিত্ব এখন কিছু চায়ের দোকানে আর রুটি তরকারি বিক্রির কিছু মিনি রেস্টুরেন্টে মাছ কুটতে এখন ছাই লাগে না কারণ মাছ বাজারে কোটাকুটি হয়েই এখন বাড়িতে ঢোকে আর বাসন মাজার ক্ষেত্রে তো বিপ্লব ঘটে গেছে রকমারি তরল সাবান, নানান কিসিমের স্কচ ব্রাইট, হরেক সাইজের প্যাচানো তার -বাসন মাজার আয়োজন এখন বিশাল। 

মনে আছে,স্কুলে একবার তাৎক্ষণিক প্রতিযোগিতায় আমার বিষয় পড়েছিল,ছাইএকথা সেকথার পর এই গরীব দেশে ছাইয়ের একটা মস্ত বড় উপকারের কথা সেদিন বক্তৃতায় বলে ফেলেছিলাম হয়তো ওই উপকারে নিজেরাও খানিকটা অভ্যস্ত ছিলাম বলেই। প্রতিযোগিতার বিচারক বাংলার স্যার আমাকে খারাপ নম্বর দেননি তবে তার পরে আমাকে ডেকে বলেছিলেন,‘ ছাই দিয়ে দাঁত মাজা গেলেও মেজো না,দাঁত খারাপ হবে লাভা,শোভা দাঁতের মাজনগুলোর দাম তো বেশি নয়

আজ মনে পড়ছে,শুধু দাঁত মাজাই নয়,এই বর্ষা-বাদলের দিনে ছাই সেসময় আরও একটা বড় উপকারে লাগত ঢাউস,পিছল  উঠোনটিকে বশে আনতে মায়েরা তখন উনুনের ছাই উঠোনে সকাল-বিকেল ছড়িয়ে দিতেন বাড়ির খালিপদ কুচোকাঁচারা রক্ষা পেত আছাড়ের হাত থেকে।

এখন অবশ্য ছাই ছড়ানোর মত সে উঠোনই গ্রামে বিরল! এককালে যে উঠোনে কানাই বলাই সরিষা কলাই রাশি করে রাখত,কানাই বলাই বিয়ের পর আলাদা হয়ে যাওয়ায় সে উঠোন এখন ভেঙে দু-টুকরো কানাই বলাই এর ছেলেরা বর্ষা-বাদলের চটি জুতো পরে টুকরো পিছল উঠোনে এখন সাবলীল হাঁটে ওদের ছাই এর প্রয়োজন পড়ে না

 


৩টি মন্তব্য:

  1. ছাই আরেকটা কাজেও লাগে স্যার।সেটা হল জমিতে জৈব সার হিসেবেও গ্রামের মানুষেরা ব্যবহার করে।এখন যেহেতু ছাই কম তাই ব্যবহার কম। কিন্তু ছোটবেলায় দেখেছি আম লেবু কলা গাছের নিচে ছাই জমা রাখতে।তাতে সেই ছাই পচে পচে সারের মত কাজ করত।ছাই গ্রাম্য জীবনের এক দৈনন্দিন সঙ্গী ছিল এটা আমিও দেখেছি।

    উত্তরমুছুন
  2. ছাই, ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল। ছাই দিয়ে দাঁত মাজা, কাদায় ছাই দিয়ে শুকানো।

    উত্তরমুছুন